গর্ভাবস্থায় কি খাবার খাবেন :
আপনি মা হতে যাচ্ছেন তাই এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে অব্যশই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি ও
আপনার শিশু খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুস্টি পাচ্ছেন কিনা।আপনার প্রতিদিনের
খাবারের তালিকায় অবশ্যই নিচের চার ধরনের পুস্টিকর খাবার থাকতে হবে।
- শাক সবজি ও ফলমূল: প্রতিদিনের খাবারে তাজা শাক সবজি ও ফলমূল অব্যশই থাকা উচিত।
- স্টার্চ জাতীয় খাবার: ভাত, রুটি ও আলু জাতীয় খাবার
- প্রোটিনযুক্ত খাবার: মাছ, মাংস, ডিম ও ডাল হল প্রোটিনের ভাল উৎস।এছাড়া সামুদ্রিক মাছে পাওয়া আয়োডিন যা বাচ্চার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ডেইরি ফুড: এগুলো হল দুধ, দই ও দুধ দিয়ে তৈরী খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে।
গর্ভাবস্থায় কি বেশী খাবার খাওয়া উচিত?
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর আগের তুলনায়
অনেক বেশী কাজ করে। তবে সাধারণত প্রথম ছয় মাসে বাড়তি ক্যালরির দরকার হয়
না।সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে যখনই ক্ষুধা বোধ হবে তখনই খাবেন।প্রথম কয়েক
সপ্তাহে বমি ভাব ও দুর্বলতার কারণে খাবারে অরুচি দেখা দিতে পারে এক্ষেত্রে
অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় কি খাওয়া উচিত নয়
ডিম বা ডিমের কুসুম পুরোপুরি সিদ্ধ
করে খেতে হবে। আধা সিদ্ধ বা কাচা ডিম খাওয়া উচিত নয়।যেকোন মাংস ভালভাবে
রান্না করে খেতে হবে।কাচা মাংস বা আধা সিদ্ধ মাংস দিয়ে তৈরী খাবার খাওয়া
উচিত নয়। খুব বেশী মুরগির বা গরুর কলিজা খাওয়া ঠিক না। দিনে এক বা দুই
কাপের বেশী কফি বা চা পান করা ঠিক না। ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।
গর্ভাবস্থায় ডায়েট করা উচিত না এতে
করে আপনার শরীর পুস্টিহীনতায় ভুগতে পারে।গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়া ভাল লক্ষন
কিন্তু আপনার ওজন যদি খুব বেশী বেড়ে যায় তাহলে খাবারের তালিকা থেকে চিনি ও
চর্বি যুক্ত খাবার বাদ দিন ও হালকা ব্যায়াম করুন। তবে তার আগে ডাক্তারের
পরামর্শ নিন।
ধীরে ধীরে ওজন বাড়া সবচেয়ে ভাল।সাধারণত গর্ভাবস্থায় ওজন ১০-১২ কেজি বাড়তে পারে।
দিনে কত বার খাবেন
নিয়মিত খাবার খাবেন। তিন বেলা
খাবারের পাশাপাশি ৩-৪ বার হালকা নাস্তা করতে পারেন। যদি খাবারে অরুচি বা
বদহজম হয় তাহলে অল্প অল্প করে বারবার খাবেন।
গর্ভাবস্থায় ১০টি গুরুত্বপূর্ন খাবার :
গর্ভাবস্থায় ১০টি গুরুত্বপূর্ন খাবার :
ডিম:
ডিম শিশুর মস্তিকের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং জন্মগত ত্রুটি দূর করে ।গর্ভাবস্থায় সিদ্ধ ডিম খাওয়া ভাল। আর কেউ যদি ওমলেট বা ডিম পোচ খেতে চান তাহলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ডিম যেন কাঁচা না থাকে।
মিষ্টি আলু:
মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং আয়রন । এগুলো শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় । এছাড়া এতে রয়েছে কপার যা শরীরে আয়রন দ্রুত শোষন করতে সাহায্য করে।মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে বা বেক করে খেতে পারেন । এছাড়া ফ্রেন্স ফ্রাইয়ের মত করেও খেতে পারেন ।
বাদাম:
বাদামে রযেছে ওমেগা-৩, প্রোটিন, ফাইবার এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল।এছাড়াও রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম যা প্রিম্যচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি কমায় ও শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের গঠনে সাহায্য করে ।
শস্য ও ডাল:
শস্য ও ডাল থেকে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন ও আয়রন পাওয়া যায় । এছাড়া জিংক ও ক্যালসিয়ামও পাওয়া য়ায় ।
চর্বি ছাড়া মাংশ:
মাংশ থেকে পাওয়া যায় প্রোটিন ও আয়রন ।যা শিশুর মস্তিকের বিকাশে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে।
কমলার রস :
এক গ্লাস কমলার রস থেকে আপনি প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি পাবেন । যা শিশুর দাতঁ ও হাড়ের গঠনকে মজবুত করবে।
দই :
দই এ দুধের চেয়ে বেশী ক্যালসিয়াম থাকে । এছাড়া এতে ভিটামিন বি এবং জিংক রয়েছে । একজন গর্ভবতী মাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যালসিয়াম গ্রহন করতে হবে ।ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলে জন্মের সময় শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মাতে পারে এবং মা পরবর্তীতে হাড়ের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে পারে ।
ওটামিল:
ওটস এ প্রচুর পরিমানে ফাইবার, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি৬ থাকে । সকাল বেলাটা একবাটি ওটামিল খাওয়া শুরু করতে পারে এতে করে সকালের বমি ভাবটা একটু কমতে পারে । গর্ভাবস্থায় অনেকে কোস্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকেন । ওটস এর প্রচুর ফাইবার আপনাকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে । ওটস বিভিন্ন সুপার শপ এবং দোকানে কিনতে পাওয়া যায় ।
সবুজ শাকসবজি:
শাক সবজি নিয়ে বলার তেমন কিছুই নেই । এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বাচ্চা ও মা দুই জনকেই সুস্থ রাখবে ।
মাছ:
বিভিন্ন ধরনের মাছ আপনার খাবারের মেন্যুতে রাখা উচিত । মাছের তেলে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও প্রোটিন ।
গর্ভাবতী মায়ের সুষম খাবার :

গর্ভের শিশুর হাড় গঠনে এবং মায়ের হাড়ের ক্ষয় রোধে ক্যালসিয়াম খুব জরুরি। ক্যালসিয়াম মায়ের উচ্চ রক্ত চাপ প্রতিরোধেও সহায়তা করে। সেজন্য গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরবর্তী সময়ে মাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০০ মি.গ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিৎ। ডিম, দুধ, মাছ, পালং শাক, বাদাম থেকে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
শর্করা
শর্করা আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়। শর্করার উৎস হিসেবে ভাত, রুটি, আলুকে বুঝি। সারাদিনে গর্ভবতী মাকে ৩ থেকে ৪ কাপ ভাত খেতে হবে। কর্মজীবী মায়ের সারাদিনে বেশি ক্যালোরি খরচ হয়, তাই তাদের ক্ষেত্রে দিনে ৪ থেকে ৫ কাপ ভাত খাওয়া দরকার। ভাতের সঙ্গে রুটি আর আলুও খাওয়া যেতে পারে।
আমিষ
আমিষ গর্ভের শিশুর শরীরের নতুন টিস্যু তৈরিতে সাহায্য করে। গর্ভবতী মাকে দৈনিক অন্তত ৬০ গ্রাম আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হয়। প্রতিদিনের আমিষের অভাব পূরণে ২ থেকে ৩ টুকরো মাছ, ৩ থেকে ৪ টুকরো মাংস ও কমপক্ষে একটি ডিম খেতে হবে। এছাড়া নিয়ম করে প্রতিদিন একগ্লাস উষ্ণ গরম দুধ পান করতে হবে।
ভিটামিন সি
ভিটামিন সি শরীরের চর্ম রোগ প্রতিরোধ করে। গর্ভবতী মায়ের উচিৎ প্রতিদিন ৭০ গ্রাম ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য খাওয়া। একটি করে ভিটামিন সি যুক্ত ফল খেতে পারেন। কমলা,লেবু,পেয়ারা,ব্রকলি ও টমেটো থেকে অনেক ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
আয়রন
গর্ভের শিশুর স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য আয়রন এর ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়া আয়রন শরীরের রক্ত বাড়াতেও সাহায্য করে। আয়রনের চাহিদা মেটাতে মাকে রোজ ২৭ গ্রাম আয়রন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ডিমের কুসুম, ডাল, কলিজা, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ থেকে আয়রনের চাহিদা পূরণ হতে পারে।
ফলিক এসিড
গর্ভবতী মায়ের শরীরে দৈনিক ০.৪ গ্রাম ফলিক এসিড প্রয়োজন থাকে। ফলিক এসিড নিউরল টিউবের কোষ অসংগতি থাকলে তা দূর করে। লেটুস পাতা, পালং শাক, কমলা ফলিক এসিডের দারুন উদাহরণ।
ফ্যাট
গর্ভবতী হওয়ার পর যথেষ্ট পরিমানে ফ্যাট জাতীয় খাদ্য খেতে হবে। ফ্যাট জাতীয় খাদ্য শিশুর মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে,তাই বেশি করে মাকে ফ্যাট জাতীয় খাদ্য খেতে হবে। দুধ, ঘি, মাখন ফ্যাট এর চাহিদা পূরণ করবে।
পানি
রোজ প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। পানি শরীরে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। রক্তের মাধ্যমে বাচ্চার শরীরে পুষ্টি পৌঁছায়। এছাড়া পানি মূত্র থলির প্রদাহ ও অতিরিক্ত ঘাম রোধ করে। পানির সঙ্গে বিভিন্ন সুপ, টাটকা ফলের রসও খাওয়া যেতে পারে।
এই পোস্টটি সত্যিই গর্ভবতী মা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সুস্থ গর্ভ এবং সুস্থ শিশুর জন্য এই সহায়ক তথ্যের জন্য ধন্যবাদ!
ReplyDeletewww.seradoctor.com