Recent

​জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা নেবার পরও কথা রাখছে না ৫৪টি প্রতিষ্ঠান

জাতীয় পরিচয় অনুবিভাগের সাড়ে ১০ কোটি ভোটারের তথ্যভাণ্ডারের সেবা নিচ্ছে সরকারি-বেসরকরি ৫৪টি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করার কথা থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের একটিও সঠিক সময়ে বিল পরিশোধ করছে না।
আবার অনেক প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগাদা দিয়েও বিল পরিশোধে সাড়া পাচ্ছে না সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। শুধু তাই নয়, বিল পরিশোধ না করার কারণ জানতে চাইলে তারও কোনো জবাব দিচ্ছে না অনেক প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বরাবর পাঠানো জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সার্ভিস চার্জ আদায় না হওয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারের জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এ পর্যন্ত মোট ৫৪টি প্রতিষ্ঠান/সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে বিল পরিশোধের কথা থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান বছর পেরিয়ে গেলেও বিল পরিশোধ করেনি। চিঠি দিয়ে বিল পরিশোধের জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তারা।
ইসিতে সচিব বরাবর জাতীয় পরিচয় অনুবিভাগের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, চুক্তি স্বাক্ষরিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে ২০১৩ সালের ৪ জুলাই চুক্তি হয়।
২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংককে ভ্যাটসহ পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ১৬৬ টাকা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪৬ লাখ ৬৯ হাজার ২৮ টাকা এবং বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে ভ্যাটসহ ৩৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নির্বাচন কমিশনের পাওনা পরিশোধে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো জবাব না পাওয়ায় তিনটি প্রতিষ্ঠানকে চলতি বছরের ৩ মার্চ কমিশনের পাওনা পরিশোধের জন্য তাগিদ দেওয়া হয় এবং ফোনেও যোগাযোগ করা হয়। ইসি থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়টি অবগত নন কিংবা অনেকদিন আগে চুক্তি হওয়ায় ভুলে গেছেন বলে জানান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে পত্র ছাড়াও অনেকবার টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তারা গত ১০ মে এক সভার আয়োজন করে, যেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত প্রবিধিমালার সার্ভিস চার্জ পরিশোধের ব্যাপারে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। সভার মিনিটস/পত্র তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেলে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে নোটে জানানো হয়।
অন্যদিকে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে চিঠি ছাড়াও অনেকদিন টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের একজন প্রতিনিধি অনুবিভাগে আসেন। সেখানে আলোচনা হয় এবং এ সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি নিয়ে যায়। গত ১৬ মে তাদের কাছ থেকে একটি চিঠি পাওয়া যায়। তাতে উল্লেখ করা হয়, নির্বাচন কমিশনের পাওনা পরিশোধের জন্য চলতি অর্থবছরে তাদের কাছে এ খাতে কোনো অর্থ নেই। এ বিষয়ে তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে লিখেছে এবং মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ প্রাপ্তিসাপেক্ষে পরবর্তী ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তারা এটি পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছে।
এ রকমভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই নির্দিষ্ট সময়ে বিল পরিশোধে গড়িমসি করছে বলে জানিয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ।
বিল তৈরিতেও জটিলতা
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগে অনলাইন সিস্টেমে বিল তৈরির কথা থাকলেও আইটি সিস্টেমের ত্রুটির কারণে সঠিকভাবে বিল তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এ নিয়েও জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিল পাঠানো হয়েছে। বাদবাকি ১৭টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এখনো অনলাইন লিংক স্থাপিত না হওয়ায় এপ্রিল পর্যন্ত বিল পাঠানো যায়নি। ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ্যাটসহ কমিশনের পাওনা রয়েছে ২৪ কোটি ৮০ লাখ ৩১ হাজার ৯৬৭ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সফটওয়্যার সংক্রান্ত জটিলতায় এখনো চুক্তি হওয়া ৫৪টি প্রতিষ্ঠানকে বিল পাঠানো সম্ভব হয়নি। আশা করি, এ মাসের মধ্যে সবাইকে বিল পাঠানো সম্ভব হবে।
চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো সময়সীমা আছে কি না যে কতদিন পরপর এ বিল পরিশোধ করতে হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তা তো আছেই। প্রতি মাসের বিল প্রতি মাসে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু বললেই তো আর হবে না। কারণ তাদেরও বিভিন্ন মিটিংয়ের মাধ্যমে এ বিল পাস করাতে হয়। 
চুক্তি স্বাক্ষরের পর এখনো পর্যন্ত কোনো বিল জমা দেয়নি এমন অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে বলে জানান আনোয়ার হোসেন।

Discovery Bangladesh Designed by Templateism.com Copyright © 2014

Powered by Blogger.
Published By Blogger Templates20