Recent

সিনেমাকেও হার মানাবে 'বজরঙ্গি ভাইজান'-এর সত্যিকারের গল্প!

সেলুলয়েডে মুন্নি আর বজরঙ্গি ভাইয়ের গল্প বাস্তবেও সত্যি হওয়ার অপেক্ষায়। বাংলাদেশ থেকে দিল্লিতে নিজের বাড়িতে ফিরতে চলেছে বারো বছরের সোনু।
রিল লাইফে হরিয়ানার বজরঙ্গি ভাইয়ের হাত ধরে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে নিজের ঘরে ফিরে গিয়েছিল শাহিদা। রিয়েল লাইফে বরগুনার জামালউদ্দিন মুসার চেষ্টায় বাংলাদেশ থেকে দিল্লিতে মা-বাবার কাছে ফেরার অপেক্ষায় বারো বছরের সোনু।
২০১০-এ দিল্লির দিলশান গার্ডেন এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় সোনু। দিল্লিতে আত্মীয়ের বাড়ি এসে বাংলাদেশের বরগুনা জেলার বাসিন্দা দুই বোন রহিমা ও আকলিমা সোনুকে অপহরণ করে বলে অভিযোগ।
বরগুনার গৌরমদন গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে সোনুকে নিজের দিদির ছেলে বলে পরিচয় দেয় রহিমা। রহিমার বাড়িতে রোজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনি আর কাজে সামান্য ভুলচুক হলে বেদম মার। এভাবেই দিন কাটছিল ছোট্ট সোনুর। প্রতিবেশী জামালউদ্দিন মুসার কাছে গোটা বিষয়টি সন্দেহজনক ঠেকে। রহিমার কাছে সদুত্তর না পেয়ে জামাল থানায় যান। যদিও, পুলিশ গোড়ায় তাঁর কথা শুনতে চায়নি।
গত বছর ডিসেম্বরে রহিমার বাড়ি থেকে সোনু পালিয়ে গেলে তাঁকে উদ্ধার করেন জামালউদ্দিন। স্থানীয় আইনজীবীর সহায়তায় সোনুকে নিয়ে তিনি সোজা গিয়ে হাজির হন বরগুনার আদালতে। গত ২২ ডিসেম্বর বরগুনার আদালতের নির্দেশে সোনুকে যশোরের পুলেরহাটের একটি হোমে নিয়ে যায় পুলিশ।
ছোট্ট সোনু শুধু এটুকুই বলতে পেরেছিল, দিল্লির সীমাপুরি এলাকায় থাকত সে। সেখান থেকে তাকে জোর করে ধরে আনা হয় বাংলাদেশে।
বাড়ি ফিরতে চায় সোনু। ওর এখন ঠিকানা যশোরের কিশোর উন্নয়নকেন্দ্র। ক্লাস টু-তে পড়ছে সে। মাস ছয়েকের মধ্যেই হোমের শিক্ষক-সহপাঠীদের ভালোবাসা আদায় করে নিয়েছে সোনু।
সোনু যখন হোমে তখন বাংলাদেশের বজরঙ্গি ভাই জামালউদ্দিন মুসা কিন্তু বসে থাকেননি। সোনুর অপহরণকারীরা তাঁর বিরুদ্ধেই থানায় মিথ্যা অপহরণের অভিযোগ করে। দেড় মাস জেলে কাটিয়ে চাকরি খোয়ান জামাল। জেল থেকে বেরিয়েই চলে আসেন দিল্লি। দিল্লির দিলশান গার্ডেনের সীমাপুরি এলাকায় সোনুর মা-বাবার খোঁজ শুরু করেন জামাল।
খোঁজ মেলে মেহবুব ও মুমতাজ দম্পতির। তাঁরা জানান, ২০১০-এ তাঁদের ছেলে নিখোঁজ হয়ে যায়। তাঁরাই সোনুর মা-বাবা বলে দাবি করেন মেহবুব ও মুমতাজ।
গত মাসে দিল্লি পুলিস মারফত খবর যায় বিদেশমন্ত্রকে। বাংলাদেশের দায়িত্বে থাকা বিদেশমন্ত্রকের যুগ্মসচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন, মেহবুব ও মুমতাজের সঙ্গে দেখা করেন।
সোনুকে ঘরে ফেরাতে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই-কমিশনার হর্ষবর্ধন সিংলা বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলির সঙ্গেও কথা বলেন। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন, যাঁরা অভিভাবকত্ব দাবি করছেন তাঁদের ডিএনএ-র সঙ্গে সোনুর ডিএনএ মিলে গেলেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সোনুকে দেশে ফেরানো হবে।
যশোরের হোমে এখন ঘরে ফেরার জন্য আকুল প্রতীক্ষা সোনুর। বন্ধু, শিক্ষকরাও চাইছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিল্লিতে মা-বাবার কাছে ফিরে যাক সে। কিন্তু, গত ছ-মাস যে এই হোমই ছিল সোনুর ঘরবাড়ি। তাই, পুনর্মিলনের কাঙ্খিত মুহূর্তের কাছে এসেও কোথাও কুরে খাচ্ছে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা।

Discovery Bangladesh Designed by Templateism.com Copyright © 2014

Powered by Blogger.
Published By Blogger Templates20