Recent

শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায় ছোলা...

রমজান মাস সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস। স্বাস্থ্যকর ও নিয়ন্ত্রিত জীবন শুরু করার উপযুক্ত সময় এই মাস। রমজান পালনের মধ্য দিয়ে আমরা উন্নত খাদ্যাভ্যাস ও আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা চর্চা করি। এ কারণে সেহরি ও ইফতারে আমাদের এমন কিছু খাবার বেছে নিতে হবে, যেটি আমাদের রসনার তৃপ্তির সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টি চাহিদাও পূরণ করবে। আর এ তালিকায় প্রথমেই আসে ছোলার নাম।
প্রাচীনকাল থেকে ছোলা ইফতারে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এটি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন—গ্রাম বা বেঙ্গল গ্রাম, গার্বানজো, ইজিপশিয়ান পি, চানা বা কাবুলি চানা ইত্যাদি। বাজারে খয়েরি, কালো, সবুজ ও লাল বর্ণের ছোলা পাওয়া যায়। এক টেবিল চামচ (১২.৫ গ্রাম) ছোলা হতে আমরা পাই—৪৬ ক্যালরি, ০.৮ গ্রাম ফ্যাট, ৩ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১০৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ৮ গ্রাম শর্করা (আঁশ ২.২ গ্রাম ও চিনি ১.৩ গ্রাম) ও ২.৪ গ্রাম প্রোটিন। 
এ ছাড়া আরো পাওয়া যায় লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ—এই উভয় উপাদান আমাদের দেহে শক্তি তৈরি ও বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং এ কারণেই রমজান মাসে ইফতারিতে ছোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ম্যাঙ্গানিজ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইমের কো-ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে, যা শক্তি উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। উচ্চ লৌহসমৃদ্ধ হওয়ার কারণে ছোলা আমাদের দেহে শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই রোজাদার ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী, স্তন্যদাত্রী মা, বাড়ন্ত শিশু ও বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের জন্য ছোলা বিশেষভাবে উপকারী।

নারীদের জন্য ছোলা বিশেষ উপকারী ভূমিকা পালন করে। এর স্যাপোনিন নামক উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে স্তন ক্যানসার, অস্টিওপোরোসিস, হট ফ্লাশ প্রতিরোধ করে।
আমরা জানি, লৌহ হিমোগ্লোবিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই হিমোগ্লোবিনের অভাবজনিত রোগে নিয়মিত ছোলা গ্রহণ করলে উপকার পাওয়া যায়।
ছোলার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স নিম্ন (২৮-৩২)। এর অর্থ হলো, এতে বিদ্যমান শর্করা ধীরগতিতে ভাঙে ও পরিপাক হয়। তাই ছোলার আঁশ রক্তের চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। রোজার সময় দিনের একটা দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকার পর যখন আমরা ছোলা খাই, তখন এর ধীরগতির অবিরাম শক্তিপ্রবাহ আমাদের শক্তির ঘাটতি পূরণ করে আমাদের আবার সতেজ করে। তবে রক্তে চিনির পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি করে না। তাই ডায়াবেটিস ও হাইপোগ্লাইসেমিয়া রোগের নিয়ন্ত্রণে ছোলা বিশেষ উপকারী। ছোলা আমাদের ক্ষুধার তাড়নাকে নিবৃত্ত করে ওজন হ্রাসেও সাহায্য করে।
ছোলা দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশসমৃদ্ধ। দ্রবণীয় আঁশ আমাদের পরিপাকতন্ত্রের গায়ে একটি জেলের মতো পদার্থ তৈরি করে। এটি ক্ষতিকর কোলেস্টেরলকে দেহ থেকে বাইরে নির্গত করতে সাহায্য করে। এতে আমাদের হৃৎপিণ্ড থাকে সুস্থ। এ ছাড়া ছোলাতে বিদ্যমান ফলেট নামক উপাদান আমাদের রক্তবাহিকাগুলোকে দৃঢ়তা প্রদান করে।
নিরামিশাষিদের জন্য ছোলা হলো প্রোটিনের সর্বোত্তম উৎস। গমের প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত করে একে গ্রহণ করা হলে এটি থেকে মাংসের সমপরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়। ছোলার এই বিশেষ গুণগুলো একে আমাদের ইফতারে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

Discovery Bangladesh Designed by Templateism.com Copyright © 2014

Powered by Blogger.
Published By Blogger Templates20