Recent

শ্বেতাঙ্গ তারকাদের নিয়ে বানানো যত বিতর্কিত হলিউড সিনেমা

পারস্যের সুফি দার্শনিক কবি জালালউদ্দিন মোহাম্মদ রুমিকে নিয়ে হলিউডে তৈরি হচ্ছে সিনেমা। আর এই ফারসি কবির চরিত্রে অভিনয় করবেন অস্কারজয়ী অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। কেন কোনও পশ্চিম এশীয় অভিনেতাকে না নিয়ে লিওনার্দোকে নেওয়া হল, তা নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে টুইটারে। অনেকেই হলিউডের এই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তবে এমন কাণ্ড এই প্রথম নয়। চরিত্রের গায়ের রং যা-ই হোক, হলিউড বরাবরই সেখানে নির্দ্বিধায় শ্বেতাঙ্গদের নিয়ে সিনেমা বানিয়েছে। এমনই কিছু সিনেমা ও চরিত্র নিয়ে আজকের প্রতিবেদন।


হলিউডের ‘প্রিন্স অফ পার্সিয়া: স্যান্ডস অফ টাইম’ ছবিতে প্রিন্স অফ পার্সিয়া চরিত্রে অভিনয় করেন জ্যাক গ্লেনহাল। ছবির কোনও চরিত্রেই পশ্চিম এশীয় বংশোদ্ভূত অভিনেতাদের নেওয়া হয়নি। তাই এই একই নামের ভিডিও গেম বাজারে দারুণ হিট হলেও ছবি নিয়ে তেমন উৎসাহ ছিল না অনেকেরই। মুখ্য চরিত্রে এক শ্বেতাঙ্গকে দেখে বেশ আপত্তি করেছিলেন গেমের ভক্তেরাও।
‘আলোহা’ ছবিতে অ্যালিসন চরিত্রে অভিনয় করেন এমা স্টোন। এক চতুর্থাংশ হাওয়াইয়ান এবং এক চতুর্থাংশ চাইনিজ মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এই অভিনেত্রী। অনেকেই এই চরিত্রের কড়া সমালোচনা করেছিলেন। কটূক্তি করে বলা হয়েছিল, পরিচালক মনে হয় এমার চেয়ে কম সাদা আর কাউকে পাননি এই চরিত্রের জন্য। পরে অবশ্য পরিচালক ক্ষমা চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি আর এমা দু’জনেই জানান, বাস্তবে পরিচালকের এমনই এক মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল, যার চেহারায় কোনও এশীয় ছাপ ছিল না।
আরেক সিনেমা ‘লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া’ তে প্রিন্স ফয়জল চরিত্রে অভিনয় করেন হলিউড অভিনেতা অ্যালেক গিনেস। হলিউডের সেরা ছবির তালিকায় বরাবর স্থান পায় ডেভিড লিন পরিচালিত এই ছবি। তা-ও কিছু কাস্টিং নিয়ে রাজনৈতিক প্রশ্ন উঠবেই। আরব রাজপুত্রের চরিত্রে অ্যালেক দারুণ অভিনয় করেছিলেন বটে। মেকআপে তাকে অনেকেটাই প্রিন্স ফয়জলের মতো দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তিনি নিজেও অভ্যেস করে কথা বলায় আরবি টান আনার চেষ্টা করেছিলেন। তবে অনেকেই একজন শ্বেতাঙ্গকে এই চরিত্রে মেনে নিতে পারেননি।
‘দ্য কনকোয়েরার’ ছবিতে চেঙ্গিস খানের ভূমিকায় অভিনয় করেন জন ওয়েন। মঙ্গোলীয় মাফিয়ার চরিত্রে জন ওয়েন বোধহয় হলিউডের ইতিহাসে অন্যতম ভুল কাস্টিং। ছবিটা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৬ সালে। কিন্তু অত বছর আগেও জন ওয়েনকে এই চরিত্রে যথেষ্ট হাস্যকর লেগেছিল। ছবির পরিচালক-প্রযোজক হাওয়ার্ড হিউজ নিজেই পরে সেটা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। এমনকী, তিনি নিজেই চাননি, দর্শক এই ছবিটা দেখুন। সাফল্যের চুড়োয় পৌঁছে এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জন ওয়েন। অনেকেই এটাকে তার পতনের শুরু বলেও মনে করেন।
মার্কিন চলচ্চিত্র ‘অ্যা মাইটি হার্ট’ য়ে মারিয়ান পার্ল এর ভূমিকায় অভিনয় করেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। ফ্রান্সে জন্ম এবং আফ্রো-চাইনিজ-কিউবান-ডাচ বংশোদ্ভূত- এমন একজন মেয়ের চরিত্রে কোনও অভিনেত্রী পাওয়া মুশকিলের কাজ ঠিকই। কিন্তু তা বলে, প্রয়াত সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের স্ত্রী মারিয়ানের চরিত্রে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে কাস্ট করার সিদ্ধান্ত মোটেই ভাল ভাবে নেননি অনেকেই। এই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য গায়ের রং বেশ কয়েক পরত গাঢ় করতে হয়েছিল জোলিকে। মাথাতেও কোঁকড়ানো পরচুলা পরেছিলেন তিনি। মারিয়ান যেহেতু বাস্তবে জোলির বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাই এই কাস্টিং নিয়ে তার কোনও আপত্তি ছিল না।
‘ঘোস্ট ইন দ্য শেল’ ছবিতে মেজর মতোকো কুসানাগি রূপে অভিনয় করেন স্কারলেট জোহানসন। জাপানের কাল্ট অ্যানিমে থেকে অনুপ্রাণিত এই ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্রে কেন কোনও জাপানি-আমেরিকান অভিনেত্রীকে নেওয়া হল না, তা নিয়ে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আপত্তি জানিয়েছিলেন। জাপানি মাংগা ভক্তেরাও বিষয়টা মেনে নিতে পারেননি। হলিউড অবশ্য কোনও অনুতাপ না করে জোর গলায় জানিয়েছে, এই কাস্টিংই বেশি দর্শক টানবে।
বিখ্যাত ছবি ‘ক্লিওপেট্রা’ তে ক্লিওপেট্রার ভূমিকায় ছিলেন এলিজাবেথ টেলর। বিশ্বের সেরা সুন্দরীদের মধ্যে অন্যতম মিশরের রানি ক্লিওপেট্রা। ১৯৬৩ সালে যখন সেই চরিত্রে এলিজাবেথ টেলরকে নেওয়া হয়েছিল, তখন বিশেষ আপত্তি ওঠেনি। কিন্তু অনেক ইতিহাসবিদের মতে, মিশরের রানি ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। তাই পরে এই কাস্টিং নিয়ে সমালোচনা শোনা যায়। ছবির রিমেকে যখন ক্লিওপেট্রার চরিত্রে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে নেওয়ার কথা শুরু হয়, তখন আফ্রো-আমেরিকানরা আরও জোরাল প্রতিবাদ করেছিলেন।

Discovery Bangladesh Designed by Templateism.com Copyright © 2014

Powered by Blogger.
Published By Blogger Templates20